আকাশের ঠিকানায় লেখা চিঠি.

তুমি কি আমার মতই আকাশ দেখ?তুমি কি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাক চাঁদটার দিকে?অজানা কোন সুবাস রাতের বাতাসে ভেসে তোমার নাকেও কি প্রবেশ করে?সেই আকাশের দিকে,সেই চাদটাকে দেখতে দেখতে  যখন সেই অজানা ঘ্রাণ ধাক্কা দেয়,তখন কি তোমার বুকের ভেতরেও হঠাৎ কেমন হাহাকার করে ওঠে?নিস্তব্ধ রাত্রিতে সেই হাহাকার কি তোমাকেও শিহরিত করে?প্রচন্ড সুখ আর অসীম দুঃখের মিশ্রিত অনুভূতি কি তোমাকেও দিশেহারা করে দেয়?কিংবা বৃষ্টিরা যখন খেলা করে পিচ ঢালা রাস্তায়,রিকশার হুডে,খোলা প্রান্তরে অথবা আমার ঝাপসা হয়ে যাওয়া চশমার কাচে তখন তোমারও কি একটা হাত খুজে পেতে ইচ্ছা করে?প্রবল ঝড়ে তোমারও কি বলতে ইচ্ছা করে-'এসো এলোমেলো হই।'? গোধূলি বেলায় হলুদ হয়ে যাওয়া আকাশে নীড়ে ফিরে যাওয়া ব্যস্ত পাখিদের দেখে তোমারও কি ইচ্ছে করেনা কাউকে শক্ত করে আকড়ে ধরতে?কারও বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করতে? 

আমি জানিনা,তোমারও কি আমার মত সবুজ ঘাসের উপর চুপচাপ শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে কিনা,শিশিরের ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছা করে কিনা,পাখির গান শুনতে ইচ্ছা করে কিনা,এক টাকার চকলেট বিক্রি করতে আসা শিশুটিকে আদর করে দিতে ইচ্ছা করে কিনা।তুমিও কি আমার মত পুরোনো দিনের কথা চিন্তা করে একা একা হাস?আকড়ে ধরার সুখ স্মৃতিটুকু কল্পনা করে আবেশে চোখ বন্ধ কর?হঠাৎ করে নিজের হাতের মধ্যে পরিচিত হাতের ছোয়া অনুভব কর?আচ্ছা তোমারও কি রাতের পরিষ্কার আকাশে সহস্র তারার মধ্যে হঠাৎ করে একটি তারা কে একটু বেশি উজ্জ্বল বলে মনে হয়?ঐ তারাটির দিকে তাকিয়ে আকাশ জুড়ে কারও মুখশ্রী ভেসে ওঠে কল্পনায়?ঐ তারা,ঐ আকাশ,ঐ আধখানা চাঁদ ,ঐ শিশির,ঐ পাখি কিংবা ঐ দুরন্ত বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা  করতে কি তোমার ভাল লাগে?যদি লাগে তবে তো জানই 'অপেক্ষা' কত বিচিত্র,মহাবিশ্বের মত বিচিত্র।মহাবিশ্বের উৎপত্তির রহস্য হয়তো একদিন উন্মোচিত হবে কোন বিদ্ঘুটে সমীকরণে,কিন্তু অপেক্ষা?অপেক্ষার স্বরূপ আবিষ্কার করবে কে?একই সাথে ভাল লাগা,আবার কষ্ট হওয়ার এই বিমূর্ত অনুভূতিকে তাত্ত্বিক সমীকরণের সাহায্যে উদঘাটন করবে কে?

আমি কোন প্রতিশ্রুতি দিবনা,কারন প্রতিশ্রুতি মাত্রই মিথ্যা।মিথ্যুকরা প্রতিশ্রুতি দেয়।যা আমি করব,সেটার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়ার দরকার পড়েনা,একবার মুখ দিয়ে বলাটাই যথেষ্ট।তার থেকেও ভাল হয় যদি মুখ দিয়ে না বলে,চোখ দিয়ে বলা যায়।আচ্ছা তুমি কি কখনও তাকিয়েছ আমার চোখের দিকে ভাল করে?মোটা চশমার আড়ালে একসমুদ্র নিয়ে বসে থাকা চোখ জোড়ার অব্যক্ত ভাষা কি তুমি বুঝতে পেরেছ?আমি মিথ্যুকের মত প্রতিশ্রুতি দিবনা,স্তাবকের মত মুখ দিয়ে কিছু বলবনা,শুধু বলব-'তাকাও আমার চোখের দিকে।গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে দেখ,উত্তাল স্রোত আর শত সহস্র ঝড় সামলে নিয়ে ওরা তোমার সাথে থাকার,তোমার জন্য গভীর তলদেশ থেকে মুক্তো তুলে আনার আর পাশে থাকার কথা বলছে।সুনামি কিংবা হারিকেন যাই আসুক না কেন সমুদ্র সেগুলো সামলে নেয়ার বার্তা পাঠাচ্ছে তোমাকে।তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?'

অপেক্ষা শেষ হওয়ার আনন্দটুকু কেমন তা আমার জানা নেই।তবে অপেক্ষা করার আনন্দটুকু নিশ্চয় স্বর্গীয়।না হলে কি বৃক্ষরাজি অপেক্ষা করত বসন্তের জন্য?পাখি কি অপেক্ষা করত গোধূলি বেলার জন্য?রাত কি অপেক্ষা করত চাদের জন্য?আচ্ছা তোমার কি আমার মত মাঝে মাঝে শূণ্যে ভেসে বেড়াতে ইচ্ছা করে মহাপরাক্রমশালী মহাকর্ষ মহাশয় কে উপেক্ষা করে?পা থেকে মাথা পর্যন্ত হালকা হয়ে যেতে ইচ্ছা করে?আমার ইচ্ছা করে,আমার ইচ্ছা করে শূন্যে হালকা হয়ে ভেসে বেড়াতে।আমি দেখতে চাই তোমার সাথে কাটানো মুহুর্তের থেকেও হালকা কিনা শূন্যে ভেসে বেড়ানো সময়টুকু।অথবা কোনটা বেশি হালকা,হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো গোলাপের পাপড়ি না তোমার সাথে কাটানো আমার মুহুর্ত গুলো?

আচ্ছা তুমিও কি আমার মতই অপেক্ষা কর?তুমিও কি অপেক্ষা কর একটি ঝড়ের রাতের জন্য?একটি স্নিগ্ধ সকালের জন্য?এক মুঠো গোলাপ পাপড়ির জন্য?তুমিও কি অপেক্ষা কর হাসনাহেনায় মাতাল হওয়ার জন্য?কিংবা জানালা দিয়ে চোখে পড়া ভোরের প্রথম রোদটির জন্য? তুমিও কি অপেক্ষা কর একটু খানি স্পর্শের জন্য?আবেশে চোখ বন্ধ করে কোন একটি হাত ধরে থাকার জন্য?যদি অপেক্ষা কর তবে পুরোটা আকাশ তোমায় দিলাম,দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাক।গোধূলি বেলায় নীড়ে ফিরে আসব আমি... তোমার কাছে... হাসনাহেনা হয়ে... গোলাপ হয়ে... বৃষ্টি হয়ে... শিশির হয়ে... 'আমি' হয়ে...  

মন্তব্যসমূহ