ভিঞ্চির মত চিন্তা করুন!




এ পর্যন্ত এ গ্রহে বিভিন্ন সময়ে যত মেধাবী ব্যক্তিত্ব এসেছেন জ্ঞানের জগতে তাদের অনেকের হয়তো অনেক অবদান আছে, কিন্তু তারা কেউই লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মত এত আলোচিত বা রহস্যময় নন। অন্য কোন ব্যক্তি এতটা সংক্রামক হতে পারেনি যতটা হয়েছে লিওনার্দো। এত বিচিত্র ভাবে মানুষের কল্পনা কে আলোড়িত করতে পারেনি আর কেউ। কালে কালে তিনি হয়ে উঠেছেন রহস্যময় এক ব্যক্তিত্ব। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি পরিণত হয়েছেন রেনেসাঁর প্রতীকে।

অথচ শিল্পী হিসেবে লিওনার্দো প্রায় দুষ্প্রাপ্যদের একজন। তাঁর মাত্র পনেরটি ক্যানভাস পাওয়া যায়, যার মধ্যে কয়েকটি আবার অসম্পূর্ণ। তাঁর একটিও ভাস্কর্য নেই। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি নয়, যে কারণে তিনি মহান হয়ে আছেন সেটা হচ্ছে তাঁর চিন্তা পদ্ধতি। আর সেই চিন্তা পদ্ধতি, অনুসন্ধিৎসু মন আর বিচিত্র বিষয়ে তাঁর গবেষণার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর নোট বুক গুলোতে। 

ভিঞ্চির নোট বুক পড়লে বোঝা যায় তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল কত বিচিত্র, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ছিল কত তীব্র। নিজের সময়ের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন তিনি। মানব শরীর সম্পর্কে জানতে কবর খুঁড়ে শবদেহ বের করতেন তিনি যা সেই সময় মারাত্মক পাপ হিসেবে বিবেচিত হত। এই ঘটনা থেকে আমরা তাঁর জ্ঞান সাধনার তীব্র আকাঙ্খা সম্পর্কে ধারণা করতে পারি। 

তাঁর জীবনী লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। কারণ তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু চমৎকার জীবনী গ্রন্থ ইতিমধ্যে আমাদের হাতে আছে। স্যার্জ ব্রেমলি রচিত তাঁর জীবনীটি (প্রকাশক আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা) বেশ তথ্য বহুল এবং সুখপাঠ্য। গল্পের ঢঙ্গে সেখানে উন্মোচিত হয়েছে লিওনার্দোর জীবনের নানা দিক। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত, মোবাশ্বের আলী রচিত 'লিওনার্দো দা ভিঞ্চি' বইটিও সুলিখিত এবং সংক্ষিপ্ত। 



লিওনার্দোর নোটবই গুলো কয়েকটি খণ্ডে রচিত হয়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম খণ্ডটি বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বইটি সহজপ্রাপ্য। 




তবে আরেকটি মজার বই সম্পর্কে বলতে পারি। কেমন হয় যদি আমরা চিন্তা করতে পারি লিওনার্দোর মত করে? লিওনার্দো যেভাবে জগতকে দেখতেন, পর্যবেক্ষন করতেন অথবা চিন্তা করতেন- আমরাও যদি সেভাবে ভাবতে পারি? হয়তো আমরা লিওনার্দো হতে পারবোনা কিন্তু নিজেদের চিন্তাকে ঝালিয়ে নিতে পারি। সেই একই চিন্তা পদ্ধতিকে প্রয়োগ করতে পারি আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও। 

ভিঞ্চির নোটবইয়ের একটি পাতার ছবি




বইটি লেখা হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। বইটির নাম How To Think Like Leonardo da Vinci, লিখেছেন Michael J. Gelb. বইটি খুবই চমৎকার একটি বই। বইটিতে লেখক ভিঞ্চির চিন্তাপদ্ধতির সাতটি দিক আলাদা করেছেন, যাকে লেখক বলছেন THE SEVEN VINCIAN PRINCIPLES, যেগুলো চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তাকেও শাণিত করতে পারি।  



সেগুলো হল-
1.CURIOSITY
2.TEST KNOWLEDGE THROUGH EXPERIENCE 
3.REFINEMENT OF SENSES
4.OPENNESS - WILLINGNESS TO EMBRACE AMBIGUITY, PARADOX, UNCERTAINTY 
5.BALANCE BETWEEN LOGIC AND IMAGINATION 
6.FITNESS
7.OBSERVATION OF THE INTERCONNECTIONS


প্রথম অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাবো সৃজনশীলতার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে Curiosity. এটা অবশ্য আলাদা করে উল্লেখ করার কিছু নেই, আমরা ইতিমধ্যেই তা জানি। প্রশ্ন থেকেই জন্ম হয় সৃষ্টির। তাই অনুসন্ধিৎসা এবং সব কিছুকে প্রশ্ন করাটা এই যাত্রায় আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। কীভাবে এই অনুসন্ধিৎসু মনকে শাণিত করা যায়, কীভাবে চর্চার মাধ্যমে এটি বাড়িয়ে তোলা যায় সেটা আলোচনা করা আছে এই অধ্যায়ে। আছে বেশ কিছু অনুশীলন। 

মনে রাখতে হবে ভিঞ্চি কে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁর এই তীব্র অনুসন্ধেয় মনের জন্যই। তিনি ভাবতেন জ্ঞান জগতের সব কিছু সম্পর্কে তাঁকে জানতে হবে। সব কিছু নিয়েই ছিল তাঁর সীমাহীন আগ্রহ। আর তাই এই আগ্রহই হল সৃজনশীলতায় প্রবেশের সদর দরজা। 

দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা দেখবো কীভাবে ক্রমাগত নিজেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানকে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা খুঁজে পাব সেই চাবিকাঠি যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষনকে শক্তিশালী করবো- আমাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় গুলো। এই ইন্দ্রিয় গুলোকে কীভাবে আরো সূক্ষ্ণ করে তোলা যায় সেটার কিছু অনুশীলন আমরা পাবো এখানে। এত কিছুর পরেও অপ্রিয় অনেক সত্য আমাদের সামনে আসতে পারে- সেগুলোকে কীভাবে আমরা জ্ঞানে পরিণত করবো সেটা জানা যাবে পরের অধ্যায়ে।

আমাদের মস্তিষ্কের দুটি অংশের কথা আমরা সবাই জানি। একটি অংশ কল্পনা ও অন্য অংশটি যুক্তি নিয়ে কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। মাইন্ড ম্যাপিং এর মাধ্যমে কীভাবে আমরা  এই দুটি অংশের মধ্যে ভারসাম্য আনতে পারি সেটাও আমরা দেখতে পাবো এখানে। 




মনকে কর্মক্ষম রাখতে দরকার সুস্থ শরীর। ফিটনেস অধ্যায়ে আমরা খুঁজে পাবো 'ভিঞ্চি ডায়েট'!

শেষ প্রিন্সিপালটি হচ্ছে পৃথিবীর সব কিছু কীভাবে একটি অপরটির সাথে জড়িত সেটি অনুভব করার ক্ষমতা সম্পর্কে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সৃজনশীলতার মূল কার্যকরণটি খুঁজে পাই। 

প্রতিটি অধ্যায়ে বিষয়টি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা, লিওনার্দোর জীবনে পদ্ধতিটির ভূমিকা এবং বেশ কিছু ওয়ার্কশিট দেয়া আছে এখানে। লিওনার্দো কীভাবে এগুলো ব্যবহার করতেন এবং আমরা কীভাবে সেগুলো চর্চা করতে পারি তার বর্ণনা আছে এখানে।  ভিঞ্চি কীভাবে নোটবুক ব্যবহার করতেন, কীভাবে আমরা পর্যবেক্ষন ক্ষমতাকে শাণিত করতে পারি, কীভাবে 'মাইন্ড ম্যাপিং' পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা যুক্তি আর কল্পনাকে একত্রে ব্যবহার করতে পারি সেটাই এই বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে সহজপাঠ্য ইংরেজিতে।




বইটি পড়লে এবং সে অনুযায়ী চর্চা করলে আপনি হয়তো মাস্টার হবেন না কিন্তু নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে, বিশেষ করে আপনি যদি কোন সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকেন, তাহলে সেই কাজ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা পাবেন! হাজার হোক আপনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষটির মত করে চিন্তা করছেন! 

আজ ১৫ এপ্রিল, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির পৃথিবীতে আগমনের দিন। রেনেসাঁর এই প্রতীক তাঁর রহস্যাবৃত মেধা নিয়ে মানব জাতির প্রতিনিধিত্ব করে যাবেন আরো কোটি কোটি বছর। জন্মদিনে তাঁকে প্রণাম। 







মন্তব্যসমূহ

Gazipurkotha বলেছেন…
এই প্রথম সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা আরো জানতে https://www.gazipurkotha.com/এই-প্রথম-সুন্দরবনে-বেড়েছে-বাঘের-সংখ্যা/22473